বুশফায়ার সঙ্কটে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি স্থায়ী হবে না বললেন ড. শরীফ রাসেল

Damage to the Flinders Chase National Park after bushfires swept through South Australia's Kangaroo Island.

Damage to the Flinders Chase National Park after bushfires swept through South Australia's Kangaroo Island. Source: AAP

Get the SBS Audio app

Other ways to listen

অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন স্থানে বুশফায়ারে পুড়ে গেছে কয়েক হাজার ঘর-বাড়ি ও ছয় মিলিয়ন হেক্টরের বেশি ভূমি। এ পর্যন্ত ২৬ ব্যক্তির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বুশফায়ারের ফলে যে ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে তার কী রকম প্রভাব পড়বে আমাদের অর্থনীতিতে, এ নিয়ে এসবিএস বাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন ফ্লিন্ডার্স ইউনিভার্সিটির কলেজ অফ বিজনেস, গভার্নমেন্ট অ্যান্ড ল এর লেকচারার ড. শরীফ রাসেল।


এ বারের বুশফায়ার সিজন এখনও শেষ হয় নি, তবে ইতোমধ্যে যে ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে তা অনেক ব্যাপক।

বুশফায়ার সংশ্লিষ্ট ঘটনায় ইতোমধ্যে নিউ সাউথ ওয়েলসে ২০ জন, সাউথ অস্ট্রেলিয়ায় ৩ জন এবং ভিক্টোরিয়ায় ৩ জনসহ অন্তত ২৬ জনের মৃত্যুর খবর জানা গেছে। হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, ছয় মিলিয়ন হেক্টরের বেশি ভূমি পুড়ে গেছে এবং প্রায় ৫০০ মিলিয়ন (৫০ কোটি) বন্যপ্রাণী মারা গেছে।

ফ্লিন্ডার্স ইউনিভার্সিটির কলেজ অফ বিজনেস, গভার্নমেন্ট অ্যান্ড ল এর লেকচারার ড. শরীফ রাসেল এসবিএস বাংলাকে বলেন,

“চলমান বুশফায়ারে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষি খাতে। অনেক ফার্মল্যান্ড পুড়ে গেছে।”

ভেজিটেবল, ভিনিয়ার্ড এবং পর্যটন খাতও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বলেন তিনি।

তার মতে, এই বুশফায়ারের ফলে অনেকে সরাসরিভাব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এছাড়া, সাধারণ জনগণ, যারা বুশফায়ার-কবলিত অঞ্চলে ছিলেন না, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন পরোক্ষভাবে।

ড. রাসেল বলেন, বুশফায়ার-কবলিত এলাকাগুলোয় যেহেতু অনেক ফার্মল্যান্ড পুড়ে গেছে, বাড়ি-ঘর এবং অবকাঠামো পুড়ে গেছে, তাই আবার নতুন করে এগুলো নির্মাণ করতে হবে। এর জন্য এসব অঞ্চলে অর্থনৈতিক তৎপরতা পুনরুজ্জীবিত করাটা চ্যালেঞ্জিং হবে।

তিনি বলেন, “সাধারণ জনগণ, (আমরা) যারা বুশফায়ার-কবলিত এলাকায় ছিলাম না, আমরা মূলত অন্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব। যেমন, সামগ্রিকভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাবে।”

অস্ট্রেলিয়ায় গত কয়েক বছর ধরে খরা চলছে। এর ফলে নিউ সাউথ ওয়েলসের উপর শতকরা ৯৯ ভাগ প্রভাব পড়েছে, বলেন তিনি। খরার কারণে ক্যাটল-ফার্মিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দ্রব্যমূল্যের উপর।

ড. রাসেল বলেন, “গরুর গোশতের দাম ৫.৭% বৃদ্ধি পেয়েছে আর ভেড়ার গোশতের দামও বেড়েছে ১৩.৫%।” তার মতে, বুশফায়ারের কারণে এই অবস্থা আরও খারাপের দিকে গেছে।

ভিনিয়ার্ডের জন্য সাউথ অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেইড হিলস অঞ্চল বিখ্যাত। বুশফায়ারে সেখানকার অনেক ভিনিয়ার্ড পুড়ে গেছে। এর ফলে ওয়াইন সরবরাহ ও দামের উপরও প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন তিনি।
Dr Sharif Rasel
Dr Sharif Rasel is a Lecturer of international business at Flinders University. Source: Supplied
তিনি আরও বলেন, বুশফায়ারের সময়ে নিউ সাউথ ওয়েলস এবং ভিক্টোরিয়াতে গুরুত্বপূর্ণ ১০০টি রাস্তা বন্ধ ছিল। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি রাস্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, প্রিন্সেস হাইওয়ে। এসব রাস্তার উপর দিয়ে কৃষকদের বিভিন্ন পণ্য সংগ্রহ করে নিয়ে যায় ডিলাররা। যেমন, লেটুস, টমেটো, দুগ্ধজাত পণ্য ইত্যাদি। 

ড. রাসেল বলেন,

“রাস্তাগুলো বন্ধ করার ফলে, শাক-সব্জী ও ডেইরি পণ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয় নি।”

“ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া এবং সাউথ অস্ট্রেলিয়াকে যুক্ত করে মাত্র একটি রাস্তা। বুশফায়ার ইমার্জেন্সির কারণে সেটি বন্ধ ছিল। এর ফলে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ায় কিছু জিনিসের দাম বেড়ে গেছে।”

ড. শরীফ রাসেল মনে করেন, লজিস্টিক্স সমস্যার কারণে দ্রব্যমূল্যের যে বৃদ্ধি ঘটবে, তা স্বল্পমেয়াদী হবে।

“যখন ইমার্জেন্সি সিচুয়েশন চলে যাবে তখন দেখা যাবে যে আসলে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গেছে।”

তবে তিনি মনে করেন, খরা এত সহজে যাবে না। যেহেতু জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে এবং অস্ট্রেলিয়ার গড় তাপমাত্রা বাড়ছে, বিশ্বের গড়ের চেয়ে বেশি হারে বাড়ছে, তাই “বুশফায়ার একটা নিয়মিত ঘটনা হয়ে যাবে”, বলেন তিনি।

তার মতে, পরিস্থিতির মোকাবেলায় “সরকারের প্রথম কাজটা হবে ক্লাইমেট চেঞ্জটাকে স্বীকার করে নেওয়া”।

“এর পর লজিস্টিক্স সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। শাকসব্জী পরিবহনে নজর দিতে হবে।”

ড. রাসেল মনে করেন, ক্ষতিগ্রস্তদেরকে সুদ-মুক্ত ঋণ দিতে পারে সরকার।

“তাদেরকে একটা ট্যাক্স-অফসেটও দেওয়া যায়। তাদের ইনকাম-ট্যাক্স একজেম্পট করে দেওয়া (যায়)। তাছাড়া, তাদেরকে কিছু ভর্তুকি দেওয়া যেতে পারে।”

কৃষকরা নিজেদের কাজের পাশাপাশি সমাজের প্রতিও অবদান রাখছেন। ড. রাসেলের মতে, যখন তারা একটি ভিনিয়ার্ড তৈরি করছেন তখন সেই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়, যা পর্যটন শিল্পকে সহায়তা করে। এসব বিষয় বিবেচনায় রাখতে পারে সরকার, বলেন তিনি।

ড. শরীফ রাসেলের সাক্ষাৎকারটি বাংলায় শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।

Follow SBS Bangla on .

Share