'কমেডি আমাদের সাহস জোগায়': অপ্রিয় সত্য তুলে ধরতে ফারহানা যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন

munaticsnew2.jpg

Farhana Muna is a Bangladeshi Australian content creator, comedian and public speaker. Credit: Farhana Muna

Get the SBS Audio app

Other ways to listen

ফারহানা মুনা ভিক্টোরিয়ান সরকারের একটি বিভাগে ডাইভার্সিটি এন্ড ইনক্লুশন টিম লীডার হিসেবে কাজ করছেন। তবে তার পরিচিতি একজন সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে, তিনি কমেডির মাধ্যমে মানুষের কাছে সমাজের নানা ট্যাবু নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে তার বক্তব্য তুলে ধরেন।


গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো
  • কমেডির মাধ্যমে সমাজের অনেক ভয়ংকর সত্যগুলো সামনাসামনি তুলে ধরেন ফারহানা মুনা।
  • বাঙালি সমাজে সংস্কারের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে তিনি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেলেও অনেক ঘৃণাপূর্ণ মন্তব্যও পেয়ে থাকেন।
  • 'মিসোজিনি (মজ্জাগত নারী-বিদ্বেষ) বা প্যাট্রিয়ার্কি (পিতৃতন্ত্র) সেটা কিন্তু শুধু ছেলেদের মধ্যেই নয়, মেয়েদের মধ্যেও আছে।'
মিজ ফারহানা মুনা পারিবারিক সহিংসতা, মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং লিঙ্গ সমতার মত বিষয়গুলো নিয়ে তার মতামত তুলে ধরেছেন এসবিএস বাংলার সাথে এক আলাপচারিতায়।

সোশ্যাল মিডিয়ার বিস্তার লাভের শুরুর দিকে ২০১৪ সালে তার একটি হোম ভিডিও ভাইরাল হয়। তারপর থেকে, ফারহানা মুনা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে সুপরিচিত হয়ে উঠেন।

মিজ মুনা বলেন, কমেডি ভিডিও বানানোর শুরুটা 'এক্সিডেন্টাল', আমি কখনোই ভাবিনি এ ধরণের ভিডিও বানাবো।

বাসায় একদিন একটা দাওয়াতের পর একটা ভিডিও বানিয়েছিলাম, কে কীভাবে কথা বলে বা 'টিটকারি' দেয় - এমন একটি ভিডিও আপলোড করার পর অনেকে সেটা দেখে, পরদিন সকাল পর্যন্ত এটির প্রায় ৮০,০০০-এর মত ভিউ হয়।

তখন অনেকের কাছেই উৎসাহ পেলাম, আর এভাবেই এধরণের ভিডিও বানাতে উৎসাহিত হই।

প্রথম ভিডিওর টপিকটি ছিল মেয়েদের শরীরের ওজন নিয়ে, এখানে দেখা যায় অনেক মেয়েরাও তাদের পরিচিত অন্য মেয়েদের ওজন নিয়ে মন্তব্য করে থাকে।

"বিষয়টা আমি এক্টিং করে দেখিয়েছিলাম, যদিও ওটা হাসি ঠাট্টাচ্ছলে করা হয়েছিল, কিন্তু ওটার মেসেজটি ছিল আমাদের সমাজে মেয়েদের গায়ের রং এবং ওজন নিয়ে যেসব কটুকথা শুনতে হয়ে তা দেখিয়ে দেয়া।"

জানতে চেয়েছিলাম এসব বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে কমেডি কেন বেছে নিলেন?

মিজ মুনা বলেন, প্রথমত আমি বলবো কমেডি মূলত কিসের জন্য, কমেডি আমাদেরকে একটা প্লাটফর্ম দেয়, সাহস দেয় , অনেক সিরিয়াস বিষয়গুলো, সমাজের অনেক ভয়ংকর সত্যগুলো সামনাসামনি তুলে ধরার, আলোচনা করার সুযোগ দেয়।

"যেসব বিষয় নিয়ে আপনি সিরিয়াসলি কথা বলতে পারবেন না, সেসব কঠিন সত্যগুলো কমেডির মাধ্যমে দেখানো হলে ডাইজেস্টেবল হয়, তাই আমার কাছে কমেডি একটি পারফেক্ট টুল যেখানে আপনি ফ্যামিলি ভায়োলেন্স বা লিঙ্গ সমতা লঙ্ঘন করে যেসব অন্যায় ঘটে চলেছে তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে কমেডি একটা মারাত্মক পাওয়ারফুল টুল। তো এটাই আমার ইন্সপিরেশন ছিল," বলেন তিনি।
Farhana Muna
Farhana Muna is vocal about issues of gender equality in Bangladesh and Australia
রক্ষণশীল সমাজে আলোচনা নিষিদ্ধ বিষয়গুলো সামনে নিয়ে আসা

মিজ মুনা বলেন, আমাদের বাঙালি সমাজে আমাদের একটা অভ্যাস আছে যে, আমরা ট্যাবু টপিক (রক্ষণশীল বা ঐতিহ্যবাহী সমাজে আলোচনা নিষিদ্ধ বিষয়) নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করি না, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের (কিছু বিষয়) নিয়ে, আমরা ভাবি এগুলো কি লজ্জার কথা! এগুলো নিয়ে কথা বলতে অস্বস্তিবোধ করি।

"কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় আমি ১৪-১৫ বছর ধরে আছি, আমি এখনো দেখি তাদের এমনি সব বিষয়ের মুখোমুখি হতে হয় তাদের ফ্যামিলিতে, কর্মক্ষেত্রে, স্কুল-কলেজে সবখানে। তো এগুলো ট্যাকল দেয়ার প্রথম স্টেপ হচ্ছে এগুলো নিয়ে কথা বলতে হবে। আপনি যদি কোন ইস্যুকে আলোতে না নিয়ে আসেন তবে অন্ধকারে থেকে যাবে এবং তা আরো খারাপের দিকে যাবে," বলেন তিনি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষের প্রতিক্রিয়া

মিজ মুনা বলেন, সোশ্যাল মিডিয়াতে এই ভিডিওগুলোর প্রতিক্রিয়া ভালো-খারাপ দুটোই আছে। তবে ভালোর সংখ্যাই বেশি, তাদের উৎসাহেই এখনো এতো বছর ধরে এক্টিভ আছি, বিভিন্ন বিষয়ে ক্যাম্পেইন করে যাচ্ছি। বিশেষ করে মেয়েদের কাজ থেকে প্রচুর পজেটিভ কমেন্ট পাই, তারা বলে যে আপনি এসব বিষয়ে কথা বলেন বলে আমাদের মনে হয় আমাদের কথাগুলো কেউ তুলে ধরছে।

"তো সব মিলিয়ে পজেটিভ প্রতিক্রিয়াই পাওয়া যাচ্ছে, তবে নেগেটিভ প্রতিক্রিয়াও পাই, সব কিছুরই বিপরীত মত তো থাকে। কিন্তু মেয়েদের বিষয়ে যে ক্রিটিসিজমটা আসে সেটা অন্য লেভেলে চলে যায়, এটা শুধু যে দ্বিমত বা তোমার কন্টেন্ট আমার ভালো লাগে না, তা না। ক্রিটিসিজম থেকে ঘৃণার পর্যায়ে চলে যায়, অনেকটা ভায়োলেন্ট।"

তিনি বলেন, তারা এই ঘৃনাটা করছে, কারণ এসব বিষয় নিয়ে কেন কথা বলছি, তারা এই সংস্কারের বিরুদ্ধে।
আমাকে বলা হতো, নারীবাদী তুই আমাদের মেয়েদের খারাপ করতেছিস, এ ধরণের পশ্চিমা সংস্কার ছড়াচ্ছিস, তোরই নিশ্চয়ই দোষ ছিল, যার জন্য এতো কিছু সহ্য করতে হয়েছে - যা এক ধরণের ভিক্টিম শেইমিং
এমনি একটি ভিডিওর উদাহরণ টেনে মিজ মুনা বলেন, আমি ওই ভিডিওতে বলেছিলাম আমাদের ছোটবেলা থেকেই মেয়েদেরকে যৌন বিষয়ে (সচেতনতার) শিক্ষা দেয়া উচিৎ।

"এখানে বলেছিলাম শিশুদের কোনটা এপ্রোপ্রিয়েট টাচ আর কোনটা ইনএপ্রোপ্রিয়েট টাচ এই শিক্ষাটা দেয়া উচিৎ, যেটা অস্ট্রেলিয়াতে দেয়া হয়। স্কুলের বয়স থেকেই এসব বিষয়ে বলে দেয়া হয়, তোমার শরীরের প্রাইভেট পার্টে কেউ হাত দিতে পারবে না তোমার কনসেন্ট ছাড়া, হাত দিলে তোমার বাবা-মাকে বলতে হবে। আমাদের দেশে ওই সময়ে অবশ্যি এই শিক্ষাটা ছিল না, এখন আস্তে আস্তে এসব বিষয়ে সচেতনতা বাড়ছে।"
"তো আমি এটা নিয়ে ভিডিও বানিয়েছিলাম যে আমাদের এখন এই শিক্ষাটা দেয়া উচিৎ। তাহলে অনেক মেয়েরাই যৌন হয়রানি থেকে বেঁচে যাবে- ছোটবেলা থেকেই," বলেন তিনি।

"তাহলে পরিবার-পরিজনের মধ্যে তাদের চেনা কেউ ধর্ষণ বা এমন কোন কাছাকাছি অপরাধ করছে।"

তবে ফারহানা মুনা দাবী করেন, এই ভিডিওর প্রতিক্রিয়ায় তিনি প্রায় প্রতিদিনই হত্যার হুমকি কিংবা ঘৃণাপূর্ণ মন্তব্য পেতেন।

"আমাকে বলা হতো, নারীবাদী তুই আমাদের মেয়েদের খারাপ করতেছিস, এ ধরণের পশ্চিমা সংস্কার ছড়াচ্ছিস, তোরই নিশ্চয়ই দোষ ছিল, যার জন্য এতো কিছু সহ্য করতে হয়েছে - যা এক ধরণের ভিক্টিম শেইমিং (ঘটনার শিকার ব্যক্তিকে লজ্জা দেয়া)।"
মিজ মুনা আরো একটা ভিডিওর জন্য তাকে পুলিশের দ্বারস্থ হতে হয়েছে বলে জানান।

"যদিও আমি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক, কিন্তু ঢাকায় আমার বন্ধু-বান্ধব আছে, এবং ফলোয়ারদের মধ্যে অনেক শুভাকাঙ্খী আছেন যারা র‍্যাব বা পুলিশে কর্মরত, তারা সাহায্য করেন যদি (হুমকির) বিষয়টা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যায়," বলেন তিনি।
উইমেন আর ইন্টার্নালাইজড গেটকিপার্স অফ প্যাট্রিয়ার্কি, এই প্যাট্রিয়ার্কি আমাদের ছাড়া বাড়তে পারবে না। আমাদেরকে ছোটবেলা থেকে ওভাবেই শিখিয়ে দেয়া হয়েছে যে, স্ট্যাটাস কো চালিয়ে রাখতে হলে তোমাকে এভাবেই চিন্তা করতে হবে
ফেসবুকে ফারহানা মুনার পেজ থেকে দেখা যায় যে তার বেশ কিছু ভিডিও বিপুল সংখ্যক মানুষ দেখেছে।

এমিনি একটি ভিডিও ছিল যার ভিউ হয়েছিল ৫ মিলিয়ন। সেই ভিডিওর বিষয়টি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি কমেডি করে বলেছিলাম যে কোন নারী যে বক্তব্যই দিক, ছেলেরা তার কাপড়-চোপড়ই দেখবে, তার ওড়নাটা কোথায় সেটাই দেখবে।

"আমার এই কথার সাথে অনেক মেয়েরাই রিলেট করতে পেরেছে, তারা বলেছে একদম ঠিক বলেছেন, আমি আমার বাচ্চার ফটো বা তাকে পড়ানোর ছবি যাই দিই না কেন তারা দেখবে আমার শাড়ির আচলটা কোথায়, ওড়নাটা কোথায় ইত্যাদি সেখানেই তাদের নজর যাবে - এবং সেখান থেকেই আমার চরিত্র বোঝার চেষ্টা করা হবে।"
মিজ মুনা দাবী করেন, এই ভিডিওর প্রতিক্রিয়ায় "আমার দুই হাজারের বেশি ডেথ থ্রেট এসেছিলো - এটা ছিল আমার জন্য ট্রমাটিক।"

মিজ মুনা বলেন, আর এই হুমকিগুলো অধিকাংশ আসছে পুরুষদের থেকে। তবে মহিলাদের মধ্যেও এ নিয়ে দ্বিমত আছে, কেউ বলে যে একটা রিলিজিয়াস এঙ্গেল থাকবে, বা কনজারভেটিভ এঙ্গেল থাকবে, কেউ বলে যে আপনি পোশাক-আষাক ঠিক করেন তাহলে এসব কথা শুনতে হবে না।

তিনি বলেন, মিসোজিনি (মজ্জাগত নারী-বিদ্বেষ) বা প্যাট্রিয়ার্কি (পিতৃতন্ত্র) কিন্তু শুধু ছেলেদের মধ্যেই নয়, মেয়েদের মধ্যেও আছে।

"উইমেন আর ইন্টার্নালাইজড গেটকিপার্স অফ প্যাট্রিয়ার্কি, এই প্যাট্রিয়ার্কি আমাদের ছাড়া বাড়তে পারবে না। আমাদেরকে ছোটবেলা থেকে ওভাবেই শিখিয়ে দেয়া হয়েছে যে, স্ট্যাটাস কো (চলমান রীতি) চালিয়ে রাখতে হলে তোমাকে এভাবেই চিন্তা করতে হবে," বলেন মিজ মুনা।
Farhana Muna
Farhana Muna says living in Australia gives her a unique vantage point for speaking out on taboos in her homeland. Credit: Supplied
লিঙ্গ সমতা কেন জরুরী?

লিঙ্গ সমতার উপর জোর দিয়ে মিজ মুনা বলেন, লিঙ্গ সমতা বলতে আমি বুঝি ইকুয়েল শেয়ার অফ পাওয়ার এন্ড প্রিভিলেজ বিটুইন মেল এন্ড ফিমেল, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে ডিসিশন মেকিং, স্ট্যান্ডার্ড সেট করা, যেমন একটা মেয়ের জন্য কী গ্রহণযোগ্য, কী শর্ত - এসব বিষয় ছেলেরা সেট করে থাকে। যেমন বিয়ের পর আমাকে বাচ্চা নিতে হবে, আমাকে ঘর সংসারের কাজ করতে হবে, আমি আমার ক্যারিয়ারকে অগ্রাধিকার দিলে আমি ভালো মা না, ভালো স্ত্রী না, এই যে ক্রাইটেরিয়া এটাই প্যাট্রিয়ার্কি ঠিক করে দেয়।

"তাই আমার কাছে লিঙ্গ সমতা এটাই যে আমাকে যেন এই পরীক্ষা দিতে না হয়, আমাদের জীবন আমরা কীভাবে গড়ব, আমার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা আমার কাছে থাকুক, আমার সুযোগ আমরা কীভাবে কাজে লাগাব, আমরা কতদূর স্বপ্ন দেখব, কতদূর উপরে যাব, সেখানে যাতে কোন সীমাবদ্ধতা না আসে।"

লিঙ্গ সমতা নিয়ে বলতে গেলেও বহুমাত্রিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়, অবশ্যই পজেটিভ প্রতিক্রিয়াও পাওয়া যায়।
কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডে যেহেতু আমাকে কাজ করতে হয় এখানে জেন্ডারের এই ডিসক্রিমিনেশনটা (সেক্সিজম) ফেস করতে হয় এবং আমি দেখেছি এটার সাথে যুক্ত হয় রেসিজম - এখানে এ দুটো একসাথে আপনাকে নেভিগেট করতে হবে
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ছাড়াও প্রবাসী বাংলাদেশিরাও বিভিন্ন ডিগ্রিতে ইস্যুগুলো মেলাতে পারে, বিশেষ করে যারা পশ্চিমা দেশগুলোতে থাকে, তারা কনসেপ্টগুলো বুঝতে পারে, এসব দেশে মেয়েদের ফান্ডামেন্টাল রাইট, নিরাপত্তা এই বিষয়গুলোতে সমস্যায় পড়তে হয় না। তবে অন্য কিছু বাধা মোকাবেলা করতে হয়, পশ্চিমা দেশ মানে এই নয় যে এখানে পূর্ণমাত্রায় লিঙ্গ সমতা আছে।

তবে বাংলাদেশে থাকা ব্যক্তিদের কাছ থেকে সমালোচনা বেশি হয় বলে মনে করেন মিজ মুনা।

"তারা বলে যে তোমার কথাগুলো পশ্চিমা দেশগুলোর প্রেক্ষিতে হয়তো ঠিক আছে কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে আমরা সেই পর্যায়ে পৌঁছাইনি।"

তবে তিনি এটাও মনে করেন যে, নিরাপত্তার কারণে অস্ট্রেলিয়ায় বসে লিঙ্গ সমতা বা পারিবারিক সহিংসতা নিয়ে ভিডিও বানানো বা এডভোকেসি যতটা সহজ, বাংলাদেশে সেটা মোটেও সহজ নয়।

অস্ট্রেলিয়ায় লিঙ্গ সমতার চিত্রটি কেমন?

ফারহানা মুনা বলেন, অস্ট্রেলিয়া হয়তো বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ থেকে, কিন্তু লিঙ্গ সমতার প্রশ্নে অস্ট্রেলিয়াতেও কিন্তু বৈষম্য আছে। এখানেও বেতন বৈষম্য আছে পারিবারিক সহিংসতা আছে, বিষয়টি এমন না যে এখানে নারীরা সব ক্ষেত্রেই সমান অধিকার পাচ্ছে এখানেও জেন্ডার ইস্যু আছে তবে সেটা ভিন্ন বাংলাদেশের তুলনায়।
বর্ণবাদ এবং লিঙ্গ-সংকীর্ণতা

অস্ট্রেলিয়ায় একজন সাউথ এশিয়ান নারীকে কয়েক ধরনের বৈষম্যের মুখোমুখি হতে হয় বলে মনে করেন মিজ মুনা।

"কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডে যেহেতু আমাকে কাজ করতে হয় এখানে জেন্ডারের এই ডিসক্রিমিনেশনটা (সেক্সিজম) ফেস করতে হয় এবং আমি দেখেছি এটার সাথে যুক্ত হয় রেসিজম - এখানে এ দুটো একসাথে আপনাকে নেভিগেট করতে হবে।"

এটা কিভাবে কাজ করে সে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে ফারহানা মুনা বলেন, সাউথ এশিয়ান নারীদের কাছ থেকে শ্বেতাঙ্গ অস্ট্রেলিয়ানরা প্রত্যাশা করে যে আমরা খুবই সাবমিসিভ (অনুগত) হবো, আমরা খুবই মিলেমিশে কাজ করব, আমরা খুবই বিনয়ী, চুপচাপ মাথা নিচু করে কাজ করব, খেটে যাব - খুবই মডেল মাইনোরিটি যেটাকে বলে।"

"আপনি যখন এই ক্ষেত্র থেকে বের হতে চান তখন আপনি নানা ধরনের ইন্টারেস্টিং এটিচিউড বা প্রতিক্রিয়া দেখতে পাবেন। এটা শুধু আমি একা নই, প্রচুর সার্ভে করা হয়েছে উমেন অফ কালার ব্যাকগ্রাউন্ড-এর নারীদের এবং আমার প্রচুর সহকর্মী আছে যারা বলে যে যখন আমি আমার হোয়াইট কলীগের চেয়ে বেশি (কাজ) করি, সে পুরুষ বা নারী যেই হোক তার চেয়ে বেশি যদি আমি সাফল্য দেখাই তখনই আমাকে শাটডাউন করে দেয়া হয়; যদি প্রতিবাদ করি তাহলে আমাকে বলা হবে, 'না না, ডোন্ট মেক এনি নয়েজ, জাস্ট স্টেই ইন ইয়োর লেন' - তাই আমি বলব বাঙালি নারীদের এই দুটো বিষয়ে নেভিগেট করতে হয় ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে।"

মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বাঙালি সমাজে এখনো লুকোচুরি

মানসিক স্বাস্থ্য প্রসঙ্গে মিজ মুনা বলেন, এটা আমাদের বাঙালি সমাজে এখনো ট্যাবু হিসেবে রয়ে গেছে। আমাদের মর্ডান জেনারেশনও এটাকে ট্যাবু হিসেবে দেখে থাকে।

"আমি মনে করি কোভিডের সময়ে সবার মেন্টাল হেলথ ইমপেক্টটেড হয়েছে তাই আমি সবাইকে বলব মানসিক স্বাস্থ্যকে সেভাবেই গুরুত্ব দিতে হবে যেভাবে আমরা শারীরিক স্বাস্থ্যের বেলায় করি।"

বিয়ন্ড ব্লু বা হেড স্পেস - এসব সংস্থার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়াতে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য এসব সংস্থায় বিনামূল্যে সহায়তা পাওয়া যায়।

ফারহানা মুনার পুরো সাক্ষাৎকারটি শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।

এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত।

রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: 

আমাদেরকে অনুসরণ করুন 

Share