২০১৯ সালে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুটি গুরুত্ব পেয়েছে

A fire truck is seen during a bushfire near Bilpin, 90km north west of Sydney, Thursday, December 19, 2019. (AAP Image/Mick Tsikas) NO ARCHIVING

A fire truck attends a bushfire near Bilpin, northwest of Sydney. Source: AAP

Get the SBS Audio app

Other ways to listen

বৈরী আবহাওয়া, খরা ও বুশফায়ারের মধ্য দিয়ে শেষ হতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার ২০১৯ সাল। ২০১৯ সালে আবহাওয়া বিপর্যয়ের ঘটনা সংবাদ শিরোনামে কয়েকবারই এসেছে। দুঃখজনকভাবে বুশফায়ারে মারা গেছেন বেশ কয়েকজন মানুষ। সম্পত্তি ও ঘর-বাড়ির ক্ষতি হয়েছে বিস্তর।


অস্ট্রেলিয়ার পূর্বাঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদী খরা এবং বুশফায়ার, ক্যালিফোর্নিয়ায় ওয়াইল্ড-ফায়ার বা দাবানল এবং ইওরোপ জুড়ে তীব্র তাপদাহ ইত্যাদিকে সরাসরি জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করছেন অনেকেই।

The Climate Council সহ অনেকেই এক্ষেত্রে আরও বেশি করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে। আবহাওয়ার তীব্রতা বৃদ্ধি নিয়ে The Climate Council ইতোমধ্যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।

তাদের 'Weather Gone Wild' রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বের মহাসাগরগুলো ২০১৮ সালে সবচেয়ে বেশি উষ্ণ ছিল। আর, অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে উষ্ণ ১০টি বছরের মধ্যে ৯টিই দেখা গেছে গত ২০০৫ সালের পর থেকে।

প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলোর পর ২০১৮ সালে ইনস্যুরেন্স কোম্পানিগুলো ১.২ বিলিয়ন ডলারের ক্লেইম প্রদান করেছে। Australia Institute's Climate and Energy Program এর ডাইরেক্টর Richie Merzian বলেন, এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে।

ANU এর Climate Change Institute এর Will Steffen গত জানুয়ারি মাসে লোকজনকে উৎসাহিত করেন যে, যদি তারা মনে করে যে, রাজনীতিবিদরা জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু নিয়ে যথেষ্ট কাজ করছে না, তাহলে ব্যালট বক্সের মাধ্যমে তাদেরকে শাস্তি দিতে।

আরও বেশি কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে শিক্ষার্থীরাও। দেশ জুড়ে ক্লাইমেট প্রটেস্ট কার্যক্রমে তারা অংশ নিয়েছে।

বহু শিক্ষার্থী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুইডেনের গ্রেটা থানবার্গকে অনুসরণ করার। গ্রেটা থানবার্গ টাইম ম্যাগাজিনের পার্সন অফ দি ইয়ার হয়েছেন। ১৬ বছর বয়সী এই তরুণীই সবচেয়ে কম বয়সী ব্যক্তি যাকে টাইম ম্যাগাজিন পার্সন অফ দি ইয়ার নির্বাচন করলো।

২০১৮ সালে সে সুইডিশ পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে প্রতিবাদ কর্মসূচি চালায়। বেশির ভাগ শুক্রবারগুলোতে এসব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। অবশেষে এটি একটি বৈশ্বিক আন্দোলনে পরিণত হয়। তারা  #FridaysForFuture হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে।

২০১৯ সালে তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। সেপ্টেম্বরে United Nations Climate Action  শীর্ষ বৈঠকে তিনি একটি বক্তৃতা করেন। সেখানে তিনি জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে যথেষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ না করার সমালোচনা করেন।

ডিসেম্বরে মাদ্রিদে COP25 Climate Conference এ মিজ থানবার্গ আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা করেন। এতে তিনি বলেন, ১.৯ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানির জন্য। তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের শতকরা ৭১ ভাগের জন্য দায়ী মাত্র ১০০টি কোম্পানি।

জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু নিয়ে ব্যর্থতার জন্য তিনি রাজনীতিবিদদেরকে এবং বড় বড় কর্পোরেশনগুলোকে দায়ী করেন।
অস্ট্রেলিয়ার এনার্জি মন্ত্রী Angus Taylor সেই একই কনফারেন্সে বলেন,  শুধু শক্তিশালী বাণী এবং লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করা যাবে না।

প্রতিনিধিদেরকে তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়াতে কম কার্বন নিঃসরণের জন্য বিনিয়োগ করা হচ্ছে।

প্যারিসের জলবায়ু চুক্তি অনুসারে, ২০৩০ সাল নাগাদ ২০০৫ সালের লেভেলের ২৬ থেকে ২৮ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বার বার নিশ্চয়তা দিয়ে বলেছেন যে, অস্ট্রেলিয়া এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করবে।

অস্ট্রেলিয়ার পূর্বাঞ্চলে বুশফায়ারের ঘটনা নিয়ে ডিসেম্বরে আরও একটি ক্লাইমেট প্রটেস্ট কর্মসূচি পালিত হয় সিডনিতে। সেই সময়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে সিডনির আকাশ ঢেকে গিয়েছিল বুশফায়ারের ফলে সৃষ্ট কালো ধোঁয়ায়।

বায়ুদূষণ এতোটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল যে, সিডনির লোকজন মাস্ক ব্যবহার করতে বাধ্য হন।

প্রতিবাদ কর্মসূচিতে গ্রিনস এমপি David Shoebridge বলেন, সরকার এক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন স্বীকার করেন যে, বুশফায়ারের পেছনে খরা পরিস্থিতির ভূমিকা ছিল। তিনি আরও বলেন, অস্ট্রেলিয়া একটি জাতীয় দুর্যোগ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

মাদ্রিদের জলবায়ু বিষয়ক শীর্ষ বৈঠকটি ছিল সবচেয়ে লম্বা সময় ব্যাপী। নির্ধারিত সময়ের পরেও দু’দিন বেশি সময় লেগেছে এটি শেষ হতে। এর পর দু’ সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন পক্ষ দর কষাকষি করে।

বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছুতে ব্যর্থ হয় তারা। যেমন, গ্লোবাল কার্বন মার্কেট তৈরির বিষয়।

আগামী বছর COP26 শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে গ্লাসগো-তে। এ বছর নিষ্পত্তি না হওয়া বিষয়গুলো তখন আলোচিত হবে।

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুটেরেস বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হারালো। জলবায়ু সঙ্কট নিয়ে তারা এ সময়ে ভূমিকা রাখতে পারতো।

প্রতিবেদনটি বাংলায় শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।

Follow SBS Bangla on .

Share