বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আহমদীয়া মসজিদে হামলা

 The Tahrik e-Khatme Nabuyat Muslim organisation held the protest demanding the Bangladeshi government to declare the Ahmadiyya Muslims as 'Non Muslims'.

A Bangladeshi policeman uses mace against demonstrating Tahrik e-Khatme Nabuyat activists during a protest against Ahmadiyya Muslims in Dhaka on January 3, 2013 Source: AFP

Get the SBS Audio app

Other ways to listen

সম্প্রতি বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আহমদীয়া ধর্মীয় সম্প্রদায়ের একটি মসজিদে হামলার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় মৌলভীরা দাবি করছেন তাদের উপর হামলা চালিয়েছে ‘কাদিয়ানী’রা আর আহমদী সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এটা সত্য নয় বরং তারাই আক্রমণের শিকার হয়েছেন।


বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায় আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের একটি মসজিদে এবং আশেপাশের বাড়ি-ঘরে হামলা হয়েছে বলে দেশটির আহমদীয়া নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেছেন। গত ১৪ জানুয়ারি, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।

আহমদীয় মুসলিম জামা’ত বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আহমদীয়া মুসলিম সম্প্রদায় বা কাদিয়ানিরা মাদ্রাসার ছাত্রদের পিটিয়েছে, এমন মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে আক্রমণকারীরা লোকজনকে উত্তেজিত করে এবং এ হামলা চালায়।
Ahmadiyya Muslim Jamaat, Bangladesh
Source: Facebook
আহমদীয়া সম্প্রদায়কে মূলধারার মুসলমানরা অনেক সময় ‘কাদিয়ানি’ বলে অভিহিত করে থাকেন।

-র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলা ও সংঘর্ষে আহত কয়েকজনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

-র একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে খবরে জানা গেছে, আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের অনুসারিদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে বুধবার খতমে নবুয়ত নামের একটি সংগঠন বিক্ষোভ মিছিল করেছে।

ঢাকার সংবাদপত্র -এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কান্দিপাড়ায় আহমদিয়া মুসলিম জামা’তের কর্মী-সমর্থক ও স্থানীয় মাদ্রাসা ছাত্রদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ঘটেছে। তাদের প্রতিবেদনে জামেয়া ইসলামিয়া ইউনিছিয়া মাদরাসার শিক্ষক, মাওলানা আব্দুর রহিম কাসেমীর বরাত দিয়ে বলা হয়,

“স্থানীয় শিমরাইল কান্দি মসজিদ দখল করার জন্য লন্ডন থেকে আসা আহমদিয়া নেতার নেতৃত্বে একটি সভা চলছিল। হামলাকারীরা কান্দিপাড়া খতমে নবুওয়াত মসজিদটি দখল করার চেষ্টা করে। তারা স্থানীয় মুসল্লী ও মাদরাসা ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়। হামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া ইউনিছিয়ার কিতাব বিভাগের ছাত্র সফিউল্লাহসহ বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়।”

বাংলাদেশের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল -এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়,

“ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ‘জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসার ছাত্রদের উপর হামলার প্রতিবাদে আগামী সোমবার সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। মাদ্রাসার শাইখুল হাদিস আল্লামা সাজিদুর রহমান বৃহস্পতিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।”

জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসার শাইখুল হাদিস আল্লামা সাজিদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাদ্রাসা ছাত্রদের উপর হামলাকারীদের বিচারের দাবিতে আগামী সোমবার আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি দিয়েছি।”
Ahmad Tabshir Chowdhury
Ahmad Tabshir Chowdhury, In-charge, Press & Media, Ahmadiyya Muslim Community, Bangladesh. Source: Supplied
সেদিন ঠিক কী হয়েছিল, সে বিষয়ে জানতে চাইলে আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত, বাংলাদেশের প্রেস ও মিডিয়া সেকশনের ইনচার্জ আহমদ তবশির চৌধুরী এসবিএস বাংলাকে বলেন,

“সেদিন, এটা ছিল ১৪ তারিখ, ১৪ জানুয়ারি সন্ধ্যাবেলা সেখানে আমাদের আতফালুল আহমদীয়া অর্থাৎ, আহমদী বালকদের একটা ধর্মীয় শিক্ষার ক্লাস চলছিল, মাগরিব নামাজের পরে। ... তখন এশার নামাজ হচ্ছিল পাশের মসজিদে। ... তখন হঠাৎ স্লোগান শোনা গেল যে, কাদিয়ানী কাফের, কাদিয়ানী কাফের। অনেক লোকের স্লোগান। স্লোগানের মধ্যেই বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল ছোড়া শুরু হয়ে গেল।”

আহমদ তবশির চৌধুরী বলেন, উগ্র মৌলবাদীরা আহমদী মসজিদে আক্রমণ করেন। কোনো কোনো সংবাদপত্রে উভয় পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, গণমাধ্যমে অসত্য সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে।

“তারাই আক্রমণ করেছে। আমরা তো ভিতরে ছিলাম।... এটা সঠিক না। আমরা তো অবাকই হয়েছি। স্থানীয়, বিশেষত, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে যারা রিপোর্ট দিচ্ছেন তারা এ ধরনের রিপোর্ট দিয়েছেন। কিন্তু, এটা সম্পূর্ণভাবে অসত্য। কারণ, আমাদের লোকজন তো মসজিদের ভিতরেই ছিল।”

“আমাদের লোক তো বেরই হয় নাই; বরং, আমাদের লোকজন আত্মরক্ষার জন্য গেট তালা বন্ধ করে দিয়েছে ভিতর থেকে।”

“বাইরে যাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। বাইরে না গেলে তো ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ কী করে হয়?”
Professor Robaet Ferdous
Professor Robaet Ferdous, Dept. of Mass Communication & Journalism, University of Dhaka, Bangladesh. Source: Facebook
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদেরকে সংখ্যাগরিষ্ঠরা এক তরফাই আক্রমণ করে।

“গুজব তৈরি হয়। পেপারেও দেখেছি যে, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এই পাল্টা-পাল্টির ব্যাপারটা আসলে হয় না। বাংলাদেশে দেখেছি যে-কোনো সংখ্যালঘুর ক্ষেত্রে এক তরফাই কিন্তু যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ তারা আক্রমণ করে, নির্যাতন করে। সংখ্যা(য়) যারা লঘিষ্ঠ, কম যারা, তারা ঠিক মতো প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারে না। মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার ক্ষেত্রেও, রিপোর্টিং করার ক্ষেত্রে, আমার মনে হয়েছে একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে।”

মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক সালিম সামাদ বলেন, সংখ্যালঘু নির্যাতনের সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা একটু বিতর্কিত।

“গণমাধ্যমের ভূমিকাটা একটু বিতর্কিত, আমি বলবো। ... আহমদীয়া মুসলিমরা জীবনেও কোনো দিন আক্রমণ করবে না। তাদের কালচারেই নাই। তাদের ধর্মের বিরুদ্ধে, আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ করা।”

আহমদীয়া সম্প্রদায়ের উপর বাংলাদেশে এটাই প্রথম হামলা নয়। এ প্রসঙ্গে তাদের মুখপাত্র আহমদ তবশির চৌধুরী বলেন, ১৯৬৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেই তাদের একটি সম্মেলনে হামলা করা হয় এবং এতে দু’জন মৃত্যুবরণ করেন। এরপর ১৯৮৭ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেই তাদের কয়েকটি মসজিদ দখল করে নেয় মৌলভীরা।
Saleem Samad
Human rights activist and veteran journalist Saleem Samad (standing). Source: Facebook
হামলার ঘটনার খবর পেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে শতাধিক পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

মানবাধিকার কর্মী খুশি কবীর বলেন, আহমদিদের উপরে হামলা অনেক দিন ধরে চলছে। তার মতে, হামলা করাটা হচ্ছে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া।

“আসলে এটা হঠাৎ করে না, আহমদীয়াদের উপরে হামলা বেশ অনেক বছর ধরে চলছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায়।”

“কে মুসলমান, কে মুসলমান না, কে কোন ধর্ম পালন করবে, সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আর সেটা তারই বিষয়। যে পছন্দ করছে না, সে তখন পালন করবে না। কিন্তু, হামলা করাটা হচ্ছে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া।”
Khushi Kabir
Human rights activist Khushi Kabir. Source: Supplied
অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। তার মতে, ধর্ম তো ঠিক আছে, কিন্তু ধর্মান্ধতার প্রতি এক ধরনের মানুষের মনোযোগ তৈরি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ব্লগারদেরকে হত্যা করা হয়েছে। তার মতে, প্রগতিশীল শক্তির অবস্থাও অনেকটা সংখ্যালঘুদের মতোই।

“প্রগতিশীল শক্তি, আমি মনে করি যে, খুব ভাল ভূমিকা রাখতে পারছে না। কারণ, তাদের স্পেসটাই অনেক কমে যাচ্ছে।”

কয়েকদিন আগে প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবিদেরকে “আক্রমণ করা হয়েছে, তাদেরকে মেরে ফেলা হয়েছে, ব্লগে লিখবার জন্য, বই লিখবার জন্য। কাজেই, সবমিলিয়ে যারা প্রগতিশীল শক্তি, তারাও কিন্তু বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মতোই আছে এবং তারা হত্যা, নির্যাতন, নিপীড়নের মধ্যে রয়েছে।”

মূলধারার মুসলমানদের সঙ্গে আহমদীয়া সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বিশ্বাসের কী পার্থক্য রয়েছে এবং কেন তাদেরকে অমুসলিম ঘোষণার দাবি উঠে এ সম্পর্কে আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত বাংলাদেশের প্রেস ও মিডিয়া সেকশনের ইনচার্জ আহমদ তবশির চৌধুরী বলেন, তারা মূলধারার মুসলমানদের মতোই কলেমা, নামাজ, রোযা, জাকাত এবং হজ্ব পালন করেন। তবে, তারা মনে করেন ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে হযরত ইমাম মাহদী (আ.) এর আগমন হয়ে গেছে আর মূলধারার মুসলমানরা মনে করেন এখন আগমনের সময় হয় নি।

বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি কী জানতে চাইলে জনাব তবশির চৌধুরী বলেন, আহমদীয়া সম্প্রদায়ের সদস্যরা সেখানে নিরাপত্তাহীনতায় আছেন।

অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, সবাই যেন তার মতাদর্শ শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে পারে, চর্চা করতে পারে সে রকম একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ তিনি চান।
Ahmadiyya Muslim Community in Bangladesh.
বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের একটি মসজিদে এবং আশেপাশের বাড়ি-ঘরে হামলা হয়েছে বলে দেশটির আহমদীয়া নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেছে। Source: Supplied
সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি বাংলায় শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।

Follow SBS Bangla on .

Share