শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়লেন; সেনাবাহিনীর 'দায়িত্ব গ্রহণ'

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এবং দেশ ত্যাগ করেছেন; বিক্ষোভকারীরা তার সরকারি বাসভবনে হামলা চালিয়ে তার ১৫ বছরের ক্ষমতার অবসান ঘটিয়েছে।

A woman wearing glasses and saree looks on.

Thousands of Bangladeshi protesters stormed the palace of Prime Minister Sheikh Hasina in Dhaka. Source: DPA / Tobias Hase/DPA

গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো
  • বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে গেছেন।
  • শিগগিরই অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির সেনাপ্রধান।
  • দেশে কয়েক সপ্তাহের সহিংস বিক্ষোভের পর হাসিনা ক্ষমতা ছাড়লেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটেছে। তিনি কয়েক সপ্তাহের প্রাণঘাতী বিক্ষোভের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন, এ সময় তার সাথে তার ছোট বোন শেখ রেহানাও ছিলেন।

দেশটির সেনাবাহিনী ঘোষণা করেছে যে তারা একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করবে।

হাসিনা জুলাইয়ের শুরু থেকে তার সরকারের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিক্ষোভ দমন করার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু রবিবারে ভয়াবহ নৃশংস বেশ কিছু ঘটনায় প্রায় ১০০ জন নিহত হয়, ফলশ্রুতিতে তিনি পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকের-উজ-জামান আজ সোমবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে এক সম্প্রচারে বলেন, হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এবং সেনাবাহিনী একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করবে।

"দেশ অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, অর্থনীতিতে আঘাত লেগেছে, অনেক লোক নিহত হয়েছে - সহিংসতা বন্ধ করার সময় এসেছে," সামরিক পোশাক পরিহিত ওয়াকার বলছিলেন।

তিনি বলেন, আমি আশা করি আমার বক্তব্যের পর পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
একজন পদাতিক সেনা (ক্যারিয়ার ইনফেন্ট্রিম্যান ) সেনাপ্রধান ওয়াকার বলেন যে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির সাথে কথা বলবেন। তবে তিনি এটির নেতৃত্ব দেবেন কিনা তা তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার ছিল না।

উল্লেখ্য, দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে ১৭০ মিলিয়নের মানুষের বাস।

ওয়াকার বলেন, তিনি প্রধান বিরোধী দল ও সুশীল সমাজের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন কিন্তু হাসিনার দল আওয়ামী লীগের কেউ সেখানে ছিল না।

৭৬ বছর বয়সের এই নেতার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বার্তা সংস্থা এজেন্স ফ্রান্স-প্রেসকে জানায়, ঢাকায় হাসিনার ভবনে (গণভবন) বিক্ষোভকারীরা হামলা চালানোর পরপরই হেলিকপ্টারে করে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।

সূত্রটি বলেছে যে তাকে প্রথমে মোটর শোভাযাত্রায় করে এগিয়ে নেয়া হয় এবং তার গন্তব্য সম্পর্কে সবাইকে অজ্ঞাত রেখে তাকে উড়িয়ে দেওয়া হয়।

রাজনীতিতে একটি বড় শূন্যতার আশংকা

হাসিনার সরকারি বাসভবনের গেট ভেঙ্গে যাওয়ার আগে উচ্ছ্বসিত শত শত জনতা পতাকা নাড়ছিল, কেউ কেউ রাস্তায় ট্যাঙ্কের উপরে নাচছিল।

বাংলাদেশের চ্যানেল ২৪ কম্পাউন্ডে ছুটে আসা ভিড়ের ছবি সম্প্রচার করেছে, তাতে দেখা যায় জনতা ক্যামেরার দিকে হাত নাড়িয়ে উদযাপন করছে, আসবাবপত্র ও বই লুট করছে, অন্যরা বিছানায় আরাম করছে।

এদিকে একদল লোক হাসিনার পিতা এবং দেশের স্বাধীনতার নায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের একটি মূর্তি ভাংচুর করছে।

ওয়াশিংটন ভিত্তিক উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান সতর্ক করে বলেছেন যে হাসিনার প্রস্থান "একটি বড় শূন্যতা তৈরি করবে"।

"যদি ক্ষমতার পালাবদল শান্তিপূর্ণ হয়, এবং নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত একটি অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি কম হবে বা সীমিত হবে," তিনি বলছিলেন।

"কিন্তু যদি এটি হিংসাত্মক রূপ নেয় বা অনিশ্চয়তার মধ্যে ঝুলে থাকে, তবে এটি ভিতরে এবং বাইরে আরও অস্থিতিশীলতা এবং সমস্যার ঝুঁকিতে পড়তে পারে।"

বিক্ষোভকারীরা ভবন প্রাঙ্গণে প্রবেশ করার আগে হাসিনার পুত্র নিরাপত্তা বাহিনীকে যেকোনো দখলে বাধা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

"...কোনো অনির্বাচিত সরকারকে এক মিনিটের জন্য ক্ষমতায় আসতে দেবেন না, এটা আপনাদের কর্তব্য," তার ছেলে, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সজীব ওয়াজেদ জয় ফেসবুকে একটি পোস্টে বলেন।

সিভিল সার্ভিস চাকরির কোটার বিরুদ্ধে গত মাসে শুরু হওয়া অস্থিরতার সময় নিরাপত্তা বাহিনী হাসিনার সরকারকে সমর্থন করলেও সংঘর্ষ-সহিংসতার মাত্রা বেড়ে গেলে তার পদত্যাগের জন্য ব্যাপক চাপ আসতে থাকে।
BANGLADESH-UNREST-STUDENT-PROTEST
Police use tear gas to disperse student protestors. Source: AFP / AFP
শুধু রবিবারই অন্তত ৯৪ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১৪ জন পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন।

বিক্ষোভকারী এবং সরকার সমর্থকরা দেশব্যাপী লাঠি ও ছুরি নিয়ে একে অপরের সাথে লড়াই করে এবং নিরাপত্তা বাহিনীও গুলি চালায়।

পুলিশ, সরকারী কর্মকর্তা এবং হাসপাতালের ডাক্তারদের উপর ভিত্তি করে এএফপির একটি হিসাব অনুযায়ী, জুলাই মাসের শুরুর দিকে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে এই কদিনের সহিংসতায় নিহতের মোট সংখ্যা কমপক্ষে ৩০০ জনে দাঁড়ায়।

যে 'চূড়ান্ত প্রতিবাদ' হাসিনার পতন ঘটায়

ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিরতার পর ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে সামরিক বাহিনী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে এবং দুই বছরের জন্য একটি সামরিক-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করে।

হাসিনা ২০০৯ সালে নির্বাচনে জিতে বাংলাদেশ শাসন করতে শুরু করেন এবং এর পরের মেয়াদের নির্বাচনগুলোতে সত্যিকারের বিরোধিতা ছাড়াই টানা চারবারের মত নির্বাচনে 'জয়লাভ' করেন।

মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলি তার সরকারকে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে এবং বিরোধী কর্মীদের বিচারবহির্ভূত হত্যা সহ ভিন্নমত দূর করার জন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলির অপব্যবহার করার অভিযোগ করে আসছিলো।

তবে সম্প্রতি ছাত্ররা বহুল আলোচিত কোটা স্কিম পুনঃপ্রবর্তন নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।

তবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত স্কিমটি প্রত্যাহার করা সত্ত্বেও আন্দোলন কালে প্রায় ২০০ লোকের মৃত্যু ও ব্যাপক ধরপাকড় ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দেয়।

দেশব্যাপী আইন অমান্য বা অসহযোগ আন্দোলনের সময় সোমবার সৈন্য ও পুলিশরা বিক্ষোভ থামাতে হস্তক্ষেপ করেনি, গত এক মাসের মধ্যে ছিল যা ব্যতিক্রম।

প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া রবিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, "যারা এই দেশের মানুষকে এমন চরম দুর্দশায় ঠেলে দেওয়ার জন্য দায়ী তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।"

ভারতে পৌঁছেছেন হাসিনা

এদিকে ভারতের গণমাধ্যমে আনন্দবাজার পত্রিকা জানাচ্ছে, শেখ হাসিনা ও তার বোন রেহানা ইতিমধ্যে দিল্লির কাছে গাজিয়াবাদের এয়ারবেসে অবতরণ করেছেন। তবে তার পরবর্তী গন্তব্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

This article contains AFP content that has been re-expressed in language by SBS. AFP is not responsible for errors originating from the translation process.


Share
Published 6 August 2024 12:20am
Updated 6 August 2024 9:52am
Presented by Shahan Alam
Source: AFP


Share this with family and friends