বৈরুত বিস্ফোরণ: ডোনাল্ড ট্রাম্প এটিকে ভয়াবহ হামলা বলে মনে করছেন

লেবাননের রাজধানী বৈরুতের ভয়াবহ এ বিস্ফোরণের কারণ এখনও নিশ্চিত হওয়া যায় নি। লেবানিজ কর্মকর্তারা বলছেন, বন্দরের গোডাউনে বহুদিন ধরে বিস্ফোরক পদার্থ মজুত রাখায় এ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। লেবানন বা অন্য কোনো দেশ বৈরুতে বিস্ফোরণের ঘটনায় হামলার যোগসূত্র থাকার সম্ভাবনা স্বীকার না করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এটিকে ভয়াবহ হামলা বলে মনে করছেন। এদিকে বৈরুতের ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে এবং আহত হয়েছেন চার হাজারের বেশি। ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত চার বাংলাদেশি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে এবং ৯৯ জন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন।

A helicopter at the scene of an explosion at the port of Lebanon's capital Beirut.

A helicopter at the scene of an explosion at the port of Lebanon's capital Beirut. Source: Getty



বৈরুতের ভয়াবহ এ বিস্ফোরণের কারণ এখনও নিশ্চিত হওয়া যায় নি। লেবানিজ কর্মকর্তারা বলছেন, বন্দরের গোডাউনে বহুদিন ধরে বিস্ফোরক পদার্থ মজুত রাখায় এ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। লেবাননের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ফাহমি স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ওই গোডাউনে ২০১৪ সালে বাজেয়াপ্ত করা অন্তত ২,৭০০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুত ছিল। সেখান থেকেই বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।লেবানন বা অন্য কোনো দেশ বৈরুতে বিস্ফোরণের ঘটনায় হামলার যোগসূত্র থাকার সম্ভাবনা স্বীকার না করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এটিকে ভয়াবহ হামলা বলে মনে করছেন।

এদিকে বৈরুতের ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে এবং আহত হয়েছেন চার হাজারের বেশি। ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেকে আটকা থাকায় হতাহতের এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। মঙ্গলবার বন্দরনগরী বৈরুতে দুটি বিশাল বিস্ফোরণে রাজধানী শহরটির একটি বিস্তীর্ণ অংশ কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। বৈরুতের বিস্ফোরণটি এতো শক্তিশালী ছিল যে, প্রায় ২৪০ কিলোমিটার দূরের সাইপ্রাস দ্বীপের ঘর-বাড়ির দরোজা-জানালাও কেঁপে উঠেছিল।

লেবাননের রাজধানী বৈরুতের বিস্ফোরণে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত চার বাংলাদেশি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় ৯৯ জন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে প্রবাসী কর্মী ৭৮ জন এবং অন্য ২১ জন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্য। নিহতরা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেহেদি হাসান, রাসেল মিয়া, কুমিল্লার রেজাউল ও মাদারীপুরের মিজান। নিহতরা দেশটিতে বৈধ কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর বলে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে। বিস্ফোরণে আরো বাংলাদেশি নাগরিকের হতাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন বাংলাদেশ দূতাবাসের হেড অব চ্যান্সেরি ও ফার্স্ট সেক্রেটারি আবদুল্লাহ আল মামুন।

বাংলাদেশের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, বৈরুত বন্দরের একটি ওয়্যারহাউসে ভয়াবহ বিস্ফোরণে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে মেরিটাইম টাস্কফোর্সের অধীনে নিয়োজিত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ ‘বিজয়’-এর ২১ জন সদস্য আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মো. হারুন উর রশীদ। তাঁকে আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুত মেডিক্যাল সেন্টারে (এইউবিএমসি) ভর্তি করা হয়েছে।

অন্যদের লেবাননে জাতিসংঘের অন্তর্বর্তী বাহিনী ইউনিফিলের তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হেলিকপ্টার/অ্যাম্বুল্যান্স যোগে হামুদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে তাঁরা আশঙ্কামুক্ত। শান্তি রক্ষা মিশন ইউনিফিলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আহত নৌ সদস্যদের চিকিৎসা চলছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আএসপিআর) পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়েছে যে, বৈরুতে মঙ্গলবারের বিশাল বিস্ফোরণে বন্দরের কাছে থাকা বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৈরুতে থাকা নৌবাহিনী জাহাজ বানৌজা বিজয় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের অংশ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিল।

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে মঙ্গলবারের বিস্ফোরণটি ঘটেছিল একটি গুদাম বা ওয়্যারহাউসে – যাতে বিপুল পরিমাণে একটি বিশেষ রাসায়নিক পদার্থ মজুত করে রাখা ছিল, যারা নাম এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট। প্রথম একটি বিস্ফোরণ ঘটে যা থেকে সাদা ধোঁয়ার কুণ্ডলি আকাশে উঠছিল।

আর ঠিক তখনই ঘটে দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি যাতে প্রথম সৃষ্টি হয় একটি বিশাল আগুনের গোলা, তার পর বাতাসের ঝাপটায় তৈরি হয় ব্যাঙের ছাতার মতো আকারের পানি ও বাষ্পের সাদা মেঘ – কয়েক সেকেণ্ডের মধ্যেই তা মিলিয়ে যায়, তার পরই দেখা যায় পাক খেয়ে উঠছে লাল রঙের ধোঁয়ার কুণ্ডলি। পুরো ব্যাপারটা ঘটে মাত্র চার সেকেণ্ডের মধ্যে। সেই লাল ধোঁয়া থেকেই বিশেজ্ঞরা অনুমান করছেন যে, সেখানে এ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের বিস্ফোরণ ঘটেছে।
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয় এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট এমন একটি রাসায়নিক পদার্থ যা প্রধানত সার উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয় – তবে আরো বহু শিল্প কারখানায় এটা কাজে লাগে। খনিতে যে বিস্ফোরক ব্যবহৃত হয় তারও অন্যতম একটি উপাদান এটি। কিন্তু এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নিজে কোনো বিস্ফোরক পদার্থ নয়, তবে বিশেষ কিছু অবস্থায় তা বিস্ফোরকে পরিণত হতে পারে - বলছেন সাবেক ব্রিটিশ গোয়েন্দা কর্মকর্তা ফিলিপ ইনগ্রাম। একে বরং বলা যায় “অক্সিডাইজার” – অর্থাৎ যা আগুনে আরো অক্সিজেন টেনে আনে এবং আগুন আরো বেশি জ্বলে ওঠে।

মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক গ্যাবিয়েল ডা সিলভা ব্রিটিশ দৈনিক দি গার্ডিয়ানকে বলেন, এ্যামোনিয়াম নাইট্রেটে আগুন ধরানো বা একটা বিস্ফোরণ ঘটার মতো অবস্থায় নিয়ে যাওয়া বেশ কঠিন। তবে ডা সিলভা বলছিলেন, তার ধারণা কোনোভাবে এই এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট দূষিত হয়ে গেছে - হয়তো তেল বা অন্য কিছুর সংস্পর্শে এসে, এবং সেটাই এই বিস্ফোরণের কারণ।

আগুনের সংস্পর্শে এলে এটি অত্যন্ত সক্রিয় বিস্ফোরক হিসেবে কাজ করে। আর বিস্ফোরিত হলে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থেকে নাইট্রোজেন অক্সাইড এবং অ্যামোনিয়ার মত বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়।

বিভিন্ন সূত্রমতে ২০১৩ সালে একটি জাহাজে করে এই এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বৈরুত বন্দরে এসেছিল। কিন্তু কীভাবে তাতে আগুন লাগলো তা এখনো স্পষ্ট নয়। গ্যাব্রিয়েল ডা সিলভা বলছিলেন, এ বিস্ফোরণের ফলে বাতাসে যে রাসায়নিক পদার্থ ছড়িয়ে পড়েছে তা অপসারিত হতে বেশি সময় লাগবে না কিন্তু যদি তা বৃষ্টির পানিতে এসিডের কণা সৃষ্টি করার মতো কিছু ঘটায় - তাহলে তা পরবর্তীকালে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

Share
Published 6 August 2020 1:24pm
Updated 6 August 2020 1:39pm
By Abu Arefin
Presented by Abu Arefin

Share this with family and friends