বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরে মাস্ক তৈরির জন্য এক লাখ ডলার দিলেন অজ্ঞাতনামা অস্ট্রেলিয়ান

বাংলাদেশের কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে ব্যবহারের জন্য মাস্ক তৈরির প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন একদল শরণার্থী নারী। অজ্ঞাতনামা এক অস্ট্রেলিয়ান পরিবার এর খরচ যোগাচ্ছেন।

Refugee Women are being given employment manufacturing reusable masks to be worn by refugees in Cox's Bazaar.

Refugee women in the Cox's Bazar camp are being given employment. Source: Australia for UNHCR

বাংলাদেশের কক্সবাজারের ঘন-বসতিপূর্ণ শরণার্থী শিবিরের জন্য পুনঃব্যবহারযোগ্য মাস্ক তৈরির জন্য ১০০,০০০ ডলার অনুদান দিয়েছে অজ্ঞাতনামা এক অস্ট্রেলিয়ান পরিবার।

অস্ট্রেলিয়া ফর ইউএনএইচসিআর-কে দেওয়া এই অনুদান কাজে লাগবে এইড ওয়ার্কারদের। তারা প্রায় এক মিলিয়ন শরণার্থীর যত্ন নিতে পারবে যারা শরণার্থী শিবিরে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছেন।

এই প্রকল্পের আওতায়, শরণার্থী নারীদেরকে অর্থ প্রদান করা হবে পুনঃব্যবহারযোগ্য মাস্ক তৈরির জন্য। এসব মাস্ক তাদের মাঝেই বিতরণ করা হবে। অনিশ্চিত অবস্থায় থাকা বহু শরণার্থী এর ফলে কিছু অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।

এ পর্যন্ত, ৪২ জন শরণার্থী নারীকে এ কাজের জন্য নিয়োজিত করা হয়েছে এবং তারা ৩৭,৬০০ এরও বেশি মাস্ক তৈরি করেছেন।
The initiative aims to produce at least 50,000 masks.
The initiative aims to produce at least 50,000 masks. Source: UNHCR
কুতুপালং ক্যাম্পে শিশু হিসেবে এসছিলেন কুলসুমা খাতুন। এখন তিনি নিজেই পাঁচ সন্তানের মা। মাস্ক তৈরি করে পরিবারের ভরণ-পোষণ করা শরণার্থীদের মধ্যে তিনিও আছেন। তিনি বলেন,

“লকডাউন শুরু হওয়ার পর এবং শিবিরে চলাফেরায় বিধি-নিষেধ আসার পর আমি মাস্ক তৈরির কাজে যোগ দেই।”

“এই মাস্কগুলো এখানকার শরণার্থীরা ব্যবহার করবে এবং আমি আমার সমাজের প্রতি অবদান রাখতে পারছি। এ জন্য আমি খুশি।”
Mother of five Kulsuma Khatun is the only earning member from her family.
Mother of five Kulsuma Khatun is the only earning member from her family. Source: Supplied: UNHCR
২০০১ সালে মিয়ানমার থেকে এই ক্যাম্পে আসেন মিনারা বেগম (২৫)।

তিন সন্তানের মা মিনারা বেগমকে ২০১৩ সালে তার স্বামী ছেড়ে চলে যান। এই প্রকল্পের আওতায় এখন তিনি তার সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চালানোর খরচ মেটাতে পারবেন।

তিনি বলেন,

“প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা কাজ করি নির্ধারিত নকশা ও উপকরণ দিয়ে কাপড়ের মাস্ক তৈরির জন্য।”

“লকডাউন পরিস্থিতিতে আমি এই পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে খুশি। এই আয়ের একটা অংশ দিয়ে আমি আমার আগের দেনা পরিশোধ করি ... বাকি টাকা ব্যয় করবো আমার সন্তানদের পড়াশোনার পেছনে।”

Image

মাস্ক তৈরির এই প্রকল্পে ১০০,০০০ ডলার অনুদান দিয়েছে অজ্ঞাত একটি অস্ট্রেলিয়ান পরিবার। তারা নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করতে চান না।

অস্ট্রেলিয়া ফর ইউএনএইচসিআর এর ন্যাশনাল ডাইরেক্টর নাওমি স্টির বলেন,

“আমি সত্যিই অনেক আনন্দিত যে, বিশেষত এই অনুদান প্রদানকারী, যিনি এর আগে অনুদান দেন নি, তিনি সামনে অগ্রসর হয়েছেন এবং আমাদের পরামর্শ অনুসারে নতুন এই উদ্যোগটিতে উদারভাবে অংশ নিয়েছেন।”

“তাদের নামগুলো নিয়মিত ফাইন্যান্সিয়াল পেপারগুলোতে আসে না। তবে, তাদের মাঝে সত্যিই দায়িত্বশীলতা রয়েছে। তারা অন্যদেরকে সহায়তা করেন।”

“এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত নারীরা উপার্জন করতে পারবেন। এর পাশাপাশি শুধুমাত্র শরণার্থীরাই নয়, কক্সবাজারের বৃহত্তর সমাজও সুরক্ষা-সরঞ্জাম পাবেন, যা গুরুত্বপূর্ণ।”

‘শিবিরে জন-দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে না’

কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশে যখন লকডাউন চালু করা হয় তখন কক্সবাজার ক্যাম্পে প্রবেশ করা নিষিদ্ধ ছিল।

জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী সংস্থা সেই ক্যাম্পে প্রবেশকারীদের সংখ্যা ৮০ শতাংশ কমিয়ে দেয়। তখন রসদ সরবরাহ করা এবং প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলো প্রদান করার জন্য শরণার্থীদেরকে অনেক বেশি দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

কক্সবাজারে UNHCR-এর লাইভলিহুড অ্যান্ড ইকনোমিক ইনক্লুজন অফিসার সুব্রত কুমার চক্রবর্তী বলেন, সেখানকার ২৬,০০০ এরও বেশি বাসিন্দার এই ভাইরাস পরীক্ষা করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৪,০০০ এরও বেশি টেস্ট রেজাল্ট পজিটিভ পাওয়া গেছে এবং ৬০ জনেরও বেশি লোকের মৃত্যুর রিপোর্ট পাওয়া গেছে।
A health worker from an aid organization walks wearing a hazmat suit at the Kutupalong Rohingya refugee camp in Cox's Bazar, Bangladesh.
In this photo from April, a health worker walks wearing a hazmat suit at the Kutupalong Rohingya refugee camp in Cox's Bazar, Bangladesh. Source: AP
তিনি বলেন,

“ক্যাম্পগুলোর জন-ঘনত্ব যদি আপনি দেখেন, তাহলে দেখবেন লোকজন সবসময়েই গাদাগাদি করে আছে।”

“এখানে কোনো জন-দূরত্ব বা এ রকম কিছু নেই। WHO এর নির্দেশনা অনুসারে জন-দূরত্ব বজায় রাখা এখানে সম্ভব নয়।”

ঘন-বসতির জন্য শরণার্থীদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। শরণার্থী নারীদের কর্ম-সংস্থানের ব্যবস্থা এবং সুরক্ষা-সরঞ্জামের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য UNHCR মাস্ক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
এই সংস্থাটি ইতোমধ্যে সেলাই মেশিন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার জন্য ও শরণার্থী শিবিরে স্যানিটারি প্যাড এবং আন্ডার-ওয়্যার তৈরিতে দক্ষ কয়েকজন নারীর পেছনে বিনিয়োগ করছে।

মিস্টার চক্রবর্তী বলেন,

“আমরা ভেবেছি মাস্ক তৈরি করতে এসব রিসোর্স ব্যবহার করাটা ভাল হবে। নারীরাও কাজ করতে পারবেন এবং তারা কিছু অর্থও উপার্জন করতে পারবেন।”

“তারা খুবই খুশি, কারণ, তারা যা তৈরি করছে সেগুলো তাদের মাঝেই বিতরণ করা হচ্ছে। এর মানে হলো তারাও তাদের সমাজে অবদান রাখছে।”
প্রথম পর্যায়ে এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে ৫০,০০০ মাস্ক তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এই সুযোগ বিস্তৃত করা হবে আরও বেশি নারীর মাঝে।

মিস্টার চক্রবর্তী বলেন,

“এটা অনেক ভাল উদ্যোগ ছিল। আমরা সেই অনুদানদাতার প্রতি কৃতজ্ঞ, যিনি এর জন্য অর্থায়ন করেছেন।”

“নভেম্বর থেকে গণহারে আবারও উৎপাদন শুরু করা হবে বলে আমরা আশা করছি।”
মাস্ক তৈরি করার ফলে শরণার্থী শিবিরটির বাসিন্দাদের অবস্থায় কিছুটা উন্নতি হবে এবং সেখানকার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাও বৃদ্ধি পাবে।

ক্যাম্পের ভেতরে বিভিন্ন সোশাল ট্রিটমেন্ট সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে এবং স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে অর্থায়নও বাড়ানো হয়েছে। তবে, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন যদি কখনও সহজলভ্য হয়, তারপরও ভাইরাসের বিপদের ঝুঁকি আরও দীর্ঘায়িত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

মিস্টার চক্রবর্তী বলেন,

“কতদিন অপেক্ষা করতে হবে আমরা তা জানি না।”

“হয়তো ২০২১ সালের শেষ পর্যন্ত কিংবা তারও বেশি।”


অস্ট্রেলিয়ার জনগণকে অবশ্যই পরস্পরের মাঝে কমপক্ষে ১.৫ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। জন-সমাগমের সীমা সম্পর্কে জানতে আপনার রাজ্যের নিষেধাজ্ঞাগুলো দেখুন।

আপনার মাঝে যদি সর্দি-কাশির (কোল্ড কিংবা ফ্লু) লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে ঘরে অবস্থান করুন এবং আপনার ডাক্তারকে কল করে কিংবা করোনাভাইরাস হেলথ ইনফরমেশন হটলাইন, 1800 020 080 নম্বরে কল করে টেস্টের ব্যবস্থা করুন।

আপনার যদি শ্বাস-কষ্ট কিংবা মেডিকেল ইমার্জেন্সি দেখা দেয়, তাহলে 000 নম্বরে কল করুন।

৬৩ টি ভাষায় এ বিষয়ক সংবাদ ও তথ্য পেতে ভিজিট করুন: .

বাংলায় করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) বিষয়ক আমাদের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ভিজিট করুন:

Follow SBS Bangla on .
 


Share
Published 18 September 2020 12:56pm
By Naveen Razik
Presented by Sikder Taher Ahmad


Share this with family and friends